লাল ঝান্ডা হাতে নিয়েই তৃণমূল প্রার্থীকে স্বাগত জানালেন প্রবীণ বাম কর্মী : সৌজন‍্যে অনন‍্য নজির

1st April 2021 5:30 pm বর্ধমান
লাল ঝান্ডা হাতে নিয়েই তৃণমূল প্রার্থীকে স্বাগত জানালেন প্রবীণ বাম কর্মী : সৌজন‍্যে অনন‍্য নজির


প্রদীপ চট্টোপাধ্যায় ( জামালপুর ) :  খেলা হবে ’শ্লোগান তুলে ভোটের প্রচারে বের হওয়া তৃণমূল প্রর্থীকে লাল ঝান্ডা কাঁধে নিয়েই  ‘লাল সেলাম’ জানালেন এক বাম কর্মী।  বিনিময়ে তৃণমূল প্রার্থী অলোক মাঝি সৌজন্য দেখিয়ে প্রবীন ওই বাম কর্মী অরবিন্দ বন্দ্যোপাধ্যায় কে হাত জোড় করে প্রণাম জানালেন। উত্তপ্ত বাংলার ভোট রাজনীতির লড়াইয়ের ময়দান।তারই মধ্যে বুধবার বিকালে এমনই এক বিরল রাজনৈতিক  সৌজন্য বিনিময়ের দৃশ্য প্রত্যক্ষ করলেন পূর্ব বর্ধমানের জামালপুর বিধানসভার রেরুগ্রাম পঞ্চায়েত এলাকার মানুষজন। যুযুধান দুই রাজনৈতিক দলের নেতা ,কর্মী ও প্রার্থীর  একে অপরের প্রতি এমন সৌজন্য বিনময় চাক্ষুষ করে কার্যত  অভিভূত বেরুগ্রাম এলাকার ভোটাররা । তাঁরা আবেদন রাখলেন হিংসা হানাহানি দূরে সরিয়ে  এমনই সৌজন্যের পরিবেশে  মুখরিত হোক এবারের ভোট উৎসব ।তবে সিপিএমের প্রতি  তৃণমূলের এত সৌজন্য বোধ দেখানো নিয়ে কটাক্ষ করতে ছাড়েনি বিজেপি ।  তৃণমূল কংগ্রেস নেতৃত্ব জামালপুর বিধানসভা আশনে প্রার্থী করেছে অলোক কুমার মাঝিকে ।তাঁর বিরুদ্ধে বামেরা প্রার্থী করেছে গত  বিধানসভা নির্বাচনে জামালপুর আশন থেকে জয়ী হওয়া সমর হাজরা কে । অপর দিকে এই আশনে বিজেপির প্রার্থী হয়ে প্রতিদ্বন্দিতা করছেন বলরাম ব্যাপারী ।সব রাজনৈতিক দলের প্রার্থীরাই জোরদার প্রচারে নেমে পড়েছেন ।ভেটের প্রচার ঘিরেই এখন জামালপুর সরগরম । এদিন বিকালে দলের বহু কর্মী ও সমর্থককে নিয়ে বেরুগ্রাম পঞ্চায়েত এলাকায় ভোটের প্রচারে বের হন তৃণমূল প্রার্থী অলোক মাঝি । হুড খোলা একটি ছোট চারচাকা গাড়িতে  সওয়ার হয়েছিলেন প্রার্থী অলোক মাঝি , ব্লক তৃণমূলের  সভাপতি মেহেমুদ খান ,যুব সভাপতি ভূতনাথ মালিক সহ কয়েকজন ।সেই গাড়ির সামনে ও পিছনে মাইকে বাজছিল ‘খেলা হবে ’ গান । তৃণমূলের কর্মীরাও ‘খেলা হবে ’ শ্লোগানেই প্রচারে ঝড় তোলেন । নসিপুর  থেকে শুরু হওয়া তৃণমূলের ভোট প্রচারের র‍্যালি বেশ কিছু গ্রাম ঘুরে বেরুগ্রাম ঘোষ পাড়ায় পৌছায় ।ওই সময়েই কাঁধে লাল পতাকা নিয়ে এলাকার প্রবীন সিপিএম কর্মী অরবিন্দ বন্দ্যোপাধ্যায় সহকর্মীদের সঙ্গে  সেই জায়গায় তাঁর দলের পতাকা লাগানো  কাজ  করছিলেন। তৃণমূল প্রার্থী অরবিন্দ বাবুকে দেখে হাত জোড় করে প্রণাম জানান । পাশাপাশি তৃণমূল নেতা মেহেমুদ খান ও ভূতনাথ মালিকও  হাত নেড়ে প্রবীন এই বামকর্মীকে শুভেচ্ছা জানান। পাল্টা  সৌজন্য দেখাতে কাঁধে লাল ঝান্ডা নিয়েই প্রতিদ্বন্দি দলের প্রার্থি ও নেতাদের কমিউনিষ্ট কায়দাতেই লাল সেলাম জানালেন অরবিন্দ বাবু ।একই সঙ্গে তিনি বলেন ,সবাইকে স্বাগতম।এরপর সংবাদ মাধ্যমকে তিনি ,’আমি আমাদের সৌজন্য বোধের রাজনীতি দেখাতে পেরে খুশি’ । এদিকে এমন বিরল ঘটনা চাক্ষুষ করে তৃণমূলের র‍্যালিতে থাকা কর্মী ও সমর্থকদের পাশাপাশি এলাকার সাধারণ মানুষজনও আপ্লুত হন ।তাঁরা উভয়  রাজনৈতিক দশের কর্মী ও সমর্থকের সাধুবাদ জানান । 

ভোটের প্রচারে বেরিয়ে এমন সৌজন্য বোধের নিদর্শন তৈরি করতে পেরে খেশি তৃণমূল প্রার্থী  অলোক মাঝি।তিনি বলেন ,’তৃণমূল রাজনৈতিক হিংসায় বিশ্বাস করেনা । তাই ২০১১ সালে বাম শাসনের অবসান অবসান ঘাটানোর পরে তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলে ছিলেন ‘বদলা নয়- বদল চাই’ । শান্তির বাতাবরণ তৈরির জন্য নেত্রীর নির্দেশেই সর্বত্র রবীন্দ্র সংগীত বাজানো হত । বিরোধীরা তৃণমূলের বিরুদ্ধে ও তৃণমূল নেত্রীর বিরুদ্ধে যতই বিষোদগার ছড়াকনা কেন, সৌজন্য বোধের রাজনীতি থেকে যে তৃণমূল সরে আসে নি সেটাই এদিন তাঁরা আরও একবার প্রমাণ করে দিলেন“। দুই তৃণমূল নেতা মেহেমুদ খান ও ভূতনাথ মালিক বলেন , ‘সৌজন্য বোধে  রাজনীতির শিক্ষাতেই শিক্ষিত প্রতিটা তৃণমূলের কর্মী । তাই এদিনও প্রবীন বাম কর্মী অরবিন্দবাবুর প্রতি সৌজন্য বোধ দেখাতে তাঁরা কেউ  পিছপা হননি ’। জামালপুর বিধানসভার বাম প্রার্থী সমর হাজরা এই ঘটনা প্রসঙ্গে বলেন ,আমরাও চাই  রাজনীতি থেকে  শিষ্ঠাচার ও সৌজন্য বোধ যেন হারিয়ে না যায় ।যে কোন ব্যক্তি যে কোন  রাজনৈতিক দলের সঙ্গেই যুক্ত থাকতে পারেন । তাঁর পছন্দ মতো প্রার্থীকে তিনি ভোট দেবেন ,গনতন্ত্রে এটাই কাঙ্খিত । আমরা বামপন্থিরা সেই মতাদর্শেই বিশ্বাসী । আমরা চাই সাধারণ মানুষের স্বতঃস্ফূর্ত অংশ গ্রহনে  ভোট উৎসবের চেহারা নিক।’ বিজেপি প্রার্থী বলরাম ব্যাপারী অবশ্য সিপিএম ও তৃণমূলের একে অপরের প্রতি এত সৌজন্য দেখানোকে কটাক্ষ করতে ছাড়েন নি । পাল্টা প্রতিক্রিয়ায় 
বলরাম বাবু বলেন ,“সৌজন্যের ঘনঘটা দেখে মনে হচ্ছে  বিজেপিকে হারাতে তলে তলে সিপিএম ও তৃণমূল অলিখিত জোট গড়েছে“ । 


 





Others News

MEMARI . একবছর আগে আবেদন করেও মেলেনি জাতিগত শংসাপত্র : হন‍্যে হয়ে ঘুরছেন মা

MEMARI . একবছর আগে আবেদন করেও মেলেনি জাতিগত শংসাপত্র : হন‍্যে হয়ে ঘুরছেন মা


প্রদীপ চট্টোপাধ্যায় ( বর্ধমান ) : প্রায় এক বছর আগে আবেদন করেও মেয়ের জাতিগত শংসাপত্র মেলেনি । আবেদনকারীদের জাতি শংসাপত্র দেওয়ার
ক্ষেত্রে দেরি করা যাবেনা বলে জানিয়ে দিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী।কিন্তু বাস্তবে ঠিক তার উল্টোটাই ঘটে চলেছে।প্রায় এক বছর আগে  চতুর্থ শ্রেণীতে পাঠরত মেয়ের ওবিসি শংসাপত্র পাওয়ার জন্য নির্দিষ্ট নিয়ম মেনে  আবেদন করেছিলেন মা।কিন্তু মেয়ে কে পঞ্চম শ্রেণীতে ভর্তির সময় এগিয়ে আসলেও জাতি  শংসাপত্র আজও না মেলায় কার্যত হতাশ হয়ে পড়েছেন পূর্ব বর্ধমানের মেমারির রাধাকান্তপুর নিবাসী ঊর্মিলা দাস।ওবিসি শংসাপত্র পাবার জন্য ঊর্মিলাদেবী বৃহস্পতি বার মেমারি ১ ব্লক বিডিও অফিসে লিখিত ভাবে আবেদন জানিয়েছেন। শংসাপত্র পাবার জন্য বিডিও সাহেব কি ব্যবস্থা করেন সেদিকেই এখন তাকিয়ে ঊর্মিলাদেবী। 

বিডিওকে লিখিত আবেদনে ঊর্মিলাদেবী জানিয়েছেন ,তাঁর স্বামী মানিক দাস দৃষ্টিহীন প্রতিবন্ধী ।বছর ১০ বয়সী তাঁদের একমাত্র কন্যা গ্রামের বিদ্যালয়ে চতুর্থ শ্রেণীতে পাঠরত কালে তাঁর ওবিসি শংসাপত্র পাবার জন্য তিনি নির্দিষ্ট নিয়ম মেনে চলতি বছরের ২৪ জানুয়ারী আবেদন করেছিলেন।  উর্মিলাদেবী বলেন ,তার পর থেকে দীর্ঘ সময় পেরিয়ে  গেলেও তিনি তাঁর মেয়ের ওবিসি শংসাপত্র পান না।মেয়ের পঞ্চম শ্রেণীতে ভর্তির সময় এগিয়ে আসায় গত অক্টোবর মাসের শেষের দিকে তিনি শংসাপত্রের বিষয়ে মেমারি ১ ব্লকের বিডিও অফিসে খোঁজ নিতে যান।জাতি শংসাপত্র বিষয়ের বায়িত্বে থাকা বিডিও অফিসের আধিকারিক তাঁকে অনলাইনে এই সংক্রান্ত একটি নথি বের করে আনতে বলেন । অনলাইনে সেই নথি বের করেনিয়ে তিনি ফের ওই আধিকারিকের কাছে যান । তা দেখার পর ওই আধিকারিক তাঁকে  ২০ দিন বাদে আসতে বলেন । ঊর্মিলাদেবী বলেন , তিনি ২৫ দিন বাদে যাবার পর ওই আধিকারিক তাঁকে গোপগন্তার ২ গ্রাম পঞ্চায়েতে গিয়ে খোঁজ নেবার কথা বলেন । তিনি এরপর গ্রামপঞ্চায়েত অফিসে খোঁজ নিতে যান । নথি ঘেঁটে পঞ্চায়েত কর্তৃপক্ষ জানিয়ে দেয় তাঁর মেয়ের নামে কোন ওবিসি শংসাপত্র পঞ্চায়েতে আসে নি।ঊর্মিলাদেবী দাবী করেন ,এই ভাবে তিনি একবার বিডিও অফিস , আবার পঞ্চায়েত অফিসে দরবার করে চলেন । কিন্তু তাতে কাজের কাজ কিছু হয় না। মেয়ের ওবিসি শংসাপত্র পাবার জন্য  গত ১৩ ডিসেম্বর ফের তিনি বিডিও অফিসে যান ।ওই দিনও বিডিও অফিসের জাতি শংসাপত্র বিষয়ক বিভাগের আধিকারিক তাঁকে একই ভাবে পঞ্চায়েত অফিসে খোঁজ নিতে যেতে বলে দায় সারেন। পরদিন তিনি পঞ্চায়েত অফিসে খোঁজ নিতে গেলে পঞ্চায়েত কর্তৃপক্ষ ফের জানিয়ে দেয় তাঁর মেয়ের নামে  ওবিসি শংসাপত্র পঞ্চায়েতে আসে নি । কেন মেয়ের জাতি শংসাপত্র পাচ্ছেন না সেই বিষয়ে  না পঞ্চায়েত না ব্লক প্রশাসনের কর্তৃপক্ষ কেউই তাঁকে কিছু জানাতে পারেন । ঊর্মিলাদেবী বলেন ,পঞ্চম শ্রেণিতে ভর্তির আগে তার মেয়ে যাতে ওবিসি শংসাপত্র পেয়ে যায় তার ব্যবস্থা করার জন্য এদিন তিনি বিডিওর কাছে লিখিত ভাবে আবেদন জানিয়েছেন । মেমারী ১ ব্লকের বিডিও আলী মহম্মদ ওলি উল্লাহ এদিন বলেন ,“জাতি শংসাপত্র পাবার জন্য হাজার হাজার আবেদন জমা পড়ছে । তবে ঊর্মিলাদেবীর কন্যা দ্রুত যাতে বিবিসি শংসাপত্র দ্রুথ পান সেই বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে “। মেমারির বিধায়ক মধুসূদন ভট্টাচার্য্য বলেন,’মেমারি  বিধানসভা এলাকার আবেদনকারীরা দ্রুত যাতে জাতি শংসাপত্র পান সেই বিষয়ে প্রশাসনকে আরও তৎপর হওয়ার কথা বলবো’।